blogger widgets

Monday 3 March 2014

নাস্তিকঃ প্রথম পর্ব

(প্রেম মৃত্যুকে দেয় মহিমা, জীবনকে দেয় গৌরব, আর প্রবঞ্চিতকে দেয় কি? প্রবঞ্চিতকে দেয় দাহ, যে আগুন আলো জ্বালে না, অথচ দহন করে। সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দাহনে পলে পলে দগ্ধ হল কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার। - এইটি যাযাবরের ‘দৃষ্টিপাত’ উপন্যাসের একটি বিশেষ লাইন। এই লাইনটি আমার গল্পের নায়ক ঋত্বিকের সাথে অনেক মিলে গেছে –তাই উল্লেখ করলাম।)

নাস্তিক। এই শব্দটা অনেকের কাছে খুব আপত্তিকর। আশে পাশের কেউ নাস্তিক শুনলেই আমরা অনেকেই নাক সিটকাই, ভাবি – এ হল সকল আদি পাপের আঁধার। তাই নাস্তিকদের আমরা ঘৃণার চোখে দেখি। কিন্তু এ কথাটা যে ভুল তা রবীন্দ্রনাথ তার ‘চার অধ্যায়’ গল্পে জ্যাঠামশায় ও ভাইপো সতিশ চরিত্র দিয়ে বুঝিয়েছেন। তাঁদের আদর্শ ছিল আমরা নীতিবিরুদ্ধ কোনও কাজ করবো না পাছে লোকজন আমাদের নাস্তিকতা ধর্মটাকে গালি দেয়।জ্যাঠামশায় আরও বলতেন, আস্তিকরা যত খুশি নীতিহীন কাজ করুক না কেন, আমরা বিবেকের বাইরে কিছু করবনা।

বন্ধুরা, আপনাদের এখন যেই গল্পটি বলব তা আমার এক নাস্তিক বন্ধুর। তার নাম ঋত্বিক। আমার দেখা পৃথিবীর একজন খাঁটি মানুষ। উপরের যে জ্যাঠা মশায়ের কথা বললাম, সে তার অনুসারী। তার প্রথম ধর্ম, কাউকে কোনও কথা দিলে তা জীবন দিয়ে হলেও রাখতে হবে।তারপর ন্যায়-অন্যায়ের স্পষ্ট সীমারেখা দিয়ে চালিত ঋত্বিক খুবই বিবেকবান ও বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। এরকম আরও কত কি? তার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার এত গুণের জন্য আমাদের সকল বন্ধু তাকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই নাস্তিক জেনেও আমরা তাকে মাথায় করে রেখেছি।আমরা বলি, এটা তোর ব্যক্তিগত ব্যপার। তবু কিছু বন্ধু তার দারা এমন ভাবে প্রভাবিত হয়েছে যে তাকে গুরু মেনে নাস্তিকতায় দীক্ষা নিয়েছে।বলে রাখা ভাল, ঋত্বিকের সকলের সাথে মিশলেও আমাকে শুধু তার মনের গোপন কথাগুলো বলত। যদিও আমি আস্তিক, তবুও আমার উপর ছিল তার রাজ্যের বিশ্বাস। সদা হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল, অত্যন্ত রোমান্টিক, মিশুক ছেলেটি যে ভিতরে ভিতরে ভীষণ একা তা কেবল আমি জানতাম, পৃথিবীর আর কেউ তা জানত না।

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ছি। সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা।পড়ার ভীষণ চাপ। এর মধ্যে আমার প্রেমিকা মৌ–এর সাথেও প্রতিদিন দেখা করতে হয়। তবু রাতে হলে ফিরে ওর সাথে ঘাটে বসে আলাপ করতে হয়। সকল বন্ধুরা চলে যাবার পরও ও আমাকে আরও ঘণ্টা খানেক বসিয়ে ওর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বলত, আমিও আমার কথা বলতাম। বেশ কিছুদিন ওর সাথে তেমন কথা হয় না। বলেছিল, ওর মামা কানাডা গেছে, তাই মামী ও মামাতো ভাইবোনের জন্য মামার বাসায় থাকছে। গতকাল ওকে হল গেটে পেয়ে ভীষণ খুশি হলাম, কিন্তু ওর গম্ভীর মুখ আমার হৃদয়কে নাড়িয়ে দিল। প্রশ্ন করলাম, বিষয়টা কি? সে যে বিষয়টা আমাকে বলল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। যাকে আমি কোনদিন হতাশ হতে দেখিনি, তাকে মনে হল যন্ত্রণা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।ওকে নিয়ে শহিদুল্লাহ হলের পুকুর ঘাটে এসে বসলাম। ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না কীভাবে কথাটা বলবে। আমি বার বার অভয় দেয়ার পর, সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। সে যা বলল তা অনেকটা এরকম।

গত কিছুদিন ধরে অর্ক নামে একজন ৩০ ঊর্ধ্ব লোকের সাথে আমার ফেসবুকে ও মোবাইলে কথা হচ্ছিল।কথা বলতে বলতে আমার মনে হচ্ছিল আমি লোকটির প্রেমে পড়ে গেছি। এমন একটা ঘোরের জগতে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো, আমি রীতিমত মোহগ্রস্ত ছিলাম।

যেহেতু আমি জানতাম সে সমপ্রেমি, তাই আমি আঁতকে উঠিনি। বলে রাখা ভাল, আমি আস্তিক হলেও অনেকটা যুক্তিবাদী, দুনিয়াদারির খবর রাখি।আমি জানতাম, ছেলে-মেয়ে যেমন প্রেম হয়, তেমনি মেয়ে-মেয়ে বা ছেলে-ছেলেও প্রেম হতে পারে। তাকে আরও উৎসাহ জাগিয়ে বিষয়টা খুলে বলতে বললাম।


সে বলল,তুই তো জানিস আমি কোনও মেয়েকে কোনদিন ভালবাসতে পারবোনা। নাস্তিক হয়েছিলাম ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে নয়, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে। অভি যেদিন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো, তখন থেকে আমি আর কারো সাথে কোনও সম্পর্ক করিনি। তোদের সবাইকে নিয়ে আনন্দ–ফুর্তিতে দিন কাটাচ্ছিলাম।

বললাম, এখন কি হল তাই বল, খুলে বল?
-আমি যেদিন অর্কের সাথে দেখা করতে ওর বাসায় যাই, সে আমাকে পাগলের মতো আদর করেছিল। সারারাত এত কথা ও এত গল্প করেছিলাম যে, আমার মনে হল, আমি সব পেয়ে গেছি। আমি যাকে খুঁজছি এই সেই।আমার প্রতিজ্ঞা ভেঙে আমি মনে মনে আস্তিক হয়ে গেছিলাম।শুরু হল আমাদের আনন্দ-যাত্রা। প্রতিদিন তার বাসায় যাওয়া। সে আমাকে চুম্বকের মতো টানতে লাগলো। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে সে আমাকে গাড়ীতে করে বাসায় নিয়ে যেত। অন্য রকম সুখ সাগরে আমি ভাসতে লাগলাম। সে আমাকে অনেক আদর করে খাওয়াই দিত,স্নান করিয়ে দিত। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমনভাবে সে চেটে দিত মনে হতো আমার মতো এমন সৌভাগ্যবান পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সে পাগলের মতো আমায় চুম্বনে চুম্বনে সিক্ত করত। এর মধ্যে সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমিতো আনন্দে আত্মহারা। মনে মনে ওকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করি। আমাকে নিয়ে থাইল্যান্ডের পাতাইয়াতে মধুচন্দ্রিমাও করে আসে। এখানে একটা কথা বলা হয়নি, ওর অন্য এক বয়ফ্রেন্ড ছিল যে চট্টগ্রামে থাকতো। সে ফ্রেন্ডের কথা আমাকে যখন জানালো, আমার মনে হল,থাক না, আমি যা চাই তাতো পাচ্ছি, ওর ফ্রেন্ড নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমি আমার সুখের সংসার ভাঙবো কেন? আমার সামনে সে ওই ফ্রেন্ডের সাথে বিভিন্ন কথা বলত, আমি কিছুই মনে করতাম না।

এভাবে চললে কি ক্ষতি হতো? হঠাৎ সেদিন সে জানালো যে, তার ওই বয়ফ্রেন্ড একবারেই ঢাকা চলে আসছে।তাকে সে কষ্ট দিতে পারবে না। কারণ তাঁদের দীর্ঘ ২ বছরের সম্পর্ক। আমি যেন সরে যাই তার জীবন থেকে –এই অনুরোধ। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি এখন কি করবো? অর্কের কথায় সামান্য একটু অনুশোচনা ছিল মাত্র। তাও মনে হল অভিনয়।তার আবার প্রচণ্ড ধর্মবিশ্বাস। আমার মাথা কেবলই ঘুরতে লাগলো। একবার মনে হল, সে হয়তো আমাকে পরীক্ষা করছে। কিন্তু না, আমি ভুল। কারণ সে আমাকে তার বাসায় যেতে সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছে, এমনকি ওর সাথে কোনও ধরনের যোগাযোগ করতেও বারণ করেছে।তার বন্ধুটি এখন বাসায়।

এখানে আমার কি অপরাধ? আমি তার কি ক্ষতি করেছিলাম।কেন আমাকে নিয়ে এই নিষ্ঠুর খেলা খেলল? কেন সে আমার সাথে এমন করলো? আমিতো নিজের মনে নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে বন্ধু বান্ধবসহ ভালোই দিন পার করছিলাম। অভির প্রসঙ্গ তুলে তাকে মাঝে মাঝে আমি মান্না দের ওই গানটা শোনাতাম, ও তখন হাসত, বলত – আমি তোমাকে নিয়ে কখনও খেলবো না।
‘যে ক্ষতি আমি নিয়েছিলাম মেনে
সেই ক্ষতি পূরণ করতে কেন এলে
কি খেলা তুমি খেলে যাবে নতুন করে’

ঋত্বিককে আমি কি সান্ত্বনা দিব? আমার যেন ভাষা নেই। আমার ইচ্ছে করছিল, ওই অর্ককে খুন করতে।মনে মনে গালি দিয়ে বলছি, তোর মজা নেয়ার যদি জায়গা না থাকে, তুমি অন্য সমকামী ছেলেদের ব্যবহার করতি। এমন একটি ভাল মনের মানুষকে কষ্ট দেয়ার কি দরকার ছিল? (চলবে)

(বিঃদ্রঃ পাঠকের জন্য প্রশ্নঃ পরের পর্বে অর্ক কি ফিরে আসবে ঋত্বিকের ভালোবাসার কাছে? নাকি ঋত্বিক আবার নাস্তিক হয়ে যাবে? নাকি অর্কের প্রতি প্রতিশোধ নিবে? বা কি করলে ভাল হবে?)

----------------------------------------------------------------------------------------------------
গল্পটি প্রথমে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। ফেসবুকে পাঠক মন্তব্যের কিছু অংশঃ
----------------------------------------------------------------------------------------------------

Jeet Roy
prothomoto,emon karor sathe prem kora uchit naa jar allready ekjon premik ache

Jeet Roy
he is just a proxy nothing else

Shopnomoy Ekdin
nastikotar ekebarei nijosso songa baniye ....khub oprasongik vabe golpo ta lekha hoyeche...BGG page e eto eto valo golpo porechi j ....ei golpo ta valo lageni...even emotion keo touch koreni ...amr

Pallab Sil
অর্কর প্রতি অবশ্যই প্রতিশোধ নেওয়া উচিত।কারন সে স্বার্থ পর কামুক তাই ঋত্বিক এর মতন একজন সরল সবুজ সমপ্রেমি মানুষের হৃদয় নিয়ে খেলেছে।

হারানো হিয়ার নিকুন্জ্ঞ পথে
golpotite arker 2nd bf arkoke chere chole jete pare.tokhon arker abar rittik ke pauwar akankha jabe.tokhon rittik r arker sathe kono prokar somporko rakhbena.erpor rittik bujte parbe bidhata akdin na akdin onnayer sasti dan.aivabe se astik hoye jabe.

Parihan Pari
emon khankir polar fira na ashai valo sorry for the gali

রিলেটেড পোস্ট :



0 comments:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

 
^ মাথায় ওঠ