blogger widgets

Friday, 28 February 2014

ভালোবাসার রঙ

সাল ১৯৮৮, আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ রোজ বুধবার। স্থান, নোয়াখালীর সেনবাগ। 
চারিদিকে থম থমে জলাবদ্ধতায় নীরবতার রজনী, আশে পাশে তাকালে মনে হয় সাগরের মাঝে নিজের অবস্থান। রাস্তাঘাট, বাজার, স্কুল, কলেজ কিংবা খেলার মাঠ, সব পানির নীচে। শরীরে জীবন ধরে রাখার আকুল আকুতি গ্রামের সব প্রাণীর। বিদ্যুৎহীন এই অন্ধকার রাতে প্রসব ব্যথায় কাতর এক পোয়াতি মা। ৪৮ ঘণ্টা জীবন মরণের মাঝখানে দাঁড়ীয়ে জন্ম দিলেন ফুট ফুটে এক পুত্র সন্তান। পুত্র সন্তান অবধি ঠিক আছে, কিন্তু ফুট ফুটে কথাটা বেমানান সেই নবজাতকের জন্য। কারণটা নীচে প্রদত্ত, পাশের বাড়ীর ছখিনার মা বুড়ী হাতে হারিকেন নিয়ে পানি ডিঙ্গিয়ে দেখতে এসেছিলেন সদ্য ভূমিষ্ঠকে। হারিকেনের আলোয় এক নজর দেখেই, বুড়ি ভয়ে দুহাত পিছিয়ে গিয়ে বলে,
“ও মকছদের মা অ্যাই ইগা কিয়া দেখলাম, ইগা কি মানুষের ছাও নাকি কালা গাঁইর ছা বুঝইতাম হারিয়েন না”

বুঝতেই পারছেন কতটা বিদঘুটে কালো ছিল ঐ শিশু। জন্মক্ষণেই মুখে করে নিয়ে এলো ভয়াবহ ৮৮ সনের বন্যা, আর তার উপর কালো কুৎসিত গাত্রবর্ণ। সদ্যজাত শিশুকে দেখে বিদ্যাহীন কৃষক পরিবারের সবাই যখন মুখ থুবড়ে পড়ে, তখন তার জন্মদায়ী মা ভীতর ভীতর রাগে পুড়তে থাকে। অন্যর চোখে শিশুটি যতই নিকৃষ্ট হোক, পাতে দেয়ার অযোগ্য হোক, মায়ের কাছে তার নাড়ী ছেড়া ধনের দাম রাজপুত্রের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাই তো দু কলম জানা মা তার কুৎসিত ছেলের জন্য ইংরেজি নাম দেয় প্রিন্স। যদি ও তিনি প্রিন্সের অর্থ জেনে নাম ঠিক করেননি, ইংরেজি নাম মানে বিশাল কিছু ছিল তার কাছে। অর্থ বুঝত যারা, মানে তার স্কুল কলেজের সহপাঠীরা, এই নামের জাত গুষ্টি ভালো ভাবেই উদ্ধার করেছিল। হর হামেশাই তাদের মুখের একটা বাক্যতে বলি হতে হয়েছে প্রিন্সকে।
“পাতিল তলার মত রঙ তার উপরে নাম তার প্রিন্স”

স্কুল, কলেজে সহপাঠীরা কত মেয়ের সাথে লাইন মারত, কিন্তু তার কপালে কোন মেয়ে জুটল না। কোন মেয়ে ভুলে ও তার দিকে চোখ তুলে দ্বিতীয়বার তাকাতো না। অবশ্য তাতে প্রিন্সের কোন মাথা ব্যথা ছিল না। তার মেয়ে প্রীতির চেয়ে ছেলে প্রীতিটাই বেশী ভালো লাগতো। কিন্তু কথা সেই তো একই, এ রকম ছেলের সাথে যেচে এসে কোন মহা পুরুষ বুক মিলাবে? তাই নিজেকে নিজের ভীতরে সীমাবদ্ধ রেখে পার করে দিল কৈশোরের দিন গুলো। 

স্থানীয় কলেজ থেকে ভালো মার্ক নিয়ে পাশ করে প্রিন্স। তার ইচ্ছে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু কৃষক বাবার সাদ থাকলে ও সাধ্য ছিল না। দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়র সহায়তায় এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমাল ঢাকা শহরে। ও আপনাদের একটা কথা তো বলাই হয়নি, মানুষ যত কুৎসিত হোক না কেন বিধাতা তাকে কোন না কোন গুণ দিয়েই পৃথিবীতে পাঠায়। যেমন গল্পের পিন্স তুখোড় মেধাবী আর বোনাস হিসাবে ছিল অস্বাভাবিক সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারী। সেই মেধার জোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স পায় পিন্স। নোয়াখালীর এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় হলে একটা সীট ও পেয়ে যায় খুব দ্রুত।

গোঁড়ামি আর রক্ষণশীল গ্রাম্য মানুষ গুলো থেকে দূরে এসে প্রিন্স হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সে শুনেছে ঢাকা শহরের মানুষ গুলো মটেও ওরকম নয়, তারা অন্যর ব্যাপারে নিজেদের নাক গলায় না। আসলে কি তাই?
দেখতে কালো হলে অবহেলা তার জন্য অনিবার্য। এই থিউরিতে অনেকে বিশ্বাসী, অনেকে হয়তো না। বিধাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত সৌন্দর্য দিয়ে অনেকে এক্সটা এডভান্টেজ পেয়ে আসছে সেই সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে। চাকরীর জন্য ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছেন? ওখানে ও সৌন্দর্য প্রীতি, তাই বলে বলছি না সবাই, তবে অনেক অফিসের বস চায় মেধাবী আর কর্মঠর সাথে চাকুরী প্রার্থী সুন্দর, স্মার্ট, প্রেজেন্টেবল হলে প্লাস পয়েন্ট পাবে। তাহলে যে দেখতে কালো বা অসুন্দর, জন্মানোর সময় কি বিধাতা তাকে একটা মাইনাস পয়েন্ট দিয়ে পাঠিয়েছে?
বিয়ে বাড়ীতে সবাই মিলে মজা করছেন, ভিডিও ধারণকারী ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরা সবসময় সুন্দর নারী কিংবা পুরুষের মুখের উপরে বেশী তাক করতে দেখবেন। সেই সুন্দর ছেলে কিংবা সুন্দরী মেয়েটার পাশে বিয়েতে আরও অনেক কালো ছেলে মেয়ে থাকে, হয়তো দায়ে পড়ে এক দুইবার ক্যামেরা বন্ধী হয়েছে সেই সব ফেইস। তারা যখন দেখেছে পাশের জনকে নিয়ে সবার মাথামাথি করছে, তখন তাদের মনের অবস্থা কি হয় একবার ভেবে দেখুন। আর প্রেম ভালোবাসার কথা তো বাদই দিলাম। যার জন্য প্রিন্স এখন অবধি কোন মনের মানুষ খুঁজে পেল না।

এই সভ্য সমাজের তথাকথিত সৌন্দর্য প্রীতি প্রিন্স খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছে। সে জানে তার এই বিশেষ রঙ নিয়ে কোন প্রেমিক জুটবে না তার কপালে। তাই সে ইউনিভার্সিটির সমকামী বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে গেলে সবার পিছনে বসত। যেমন প্রিন্স কোন পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে। পাশ দিয়ে একটা হ্যান্ড-সাম ছেলে হেঁটে যাচ্ছে, একজন বলল, দেখ দেখ ছেলেটা কি সুন্দর। আরেকজন বলল, ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। অন্যজন তার কথা মাটিতে পড়ার আগে বলে, দূর সে আমার দিকে তাকিয়েছিল। এই নিয়ে তর্ক বেধে যায়। তৃতীয় একজন বলল, ছেলেটা আমাদের দিকে নয় প্রিন্সের দিকে তাকিয়েছিল, শত হোক সে তো রাজপুত্র। তার কথা শুনে সবাই হা হা করে হেঁসে উঠে। পিছনে বসে থাকা প্রিন্স মন খারাপ করে বলে, দেখ আমি জানি সে আমার দিকে তাকায়নি। তোদের মত সুন্দর ছেলে রেখে আমার দিকে তাকানোর প্রশ্নই আসে না। আড্ডা থেকে মন খারাপ করে উঠে যায় প্রিন্স। রাতে ঘুমোতে গিয়ে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে বিধাতার কাছে প্রশ্ন করে, আমার কি দোষ তুমিই তো বানিয়েছ কালো। কেন মানুষের মুখের কটাক্ষের প্রধান হাতিয়ার আমি? প্রিন্স কোন দিন ও তার প্রশ্নের জবাব পায়নি বিধাতার কাছ থেকে। তাই সে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা ছেঁড়ে দিয়ে হল আর ক্লাস নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। কিন্তু মানুষ বলে কথা, শরীর না হয় কালো মনটা তো আর কালো নয়, যে অন্ধ মন, প্রেম ভালোবাসার দার দারে না। হুম তার সেই সাদা মন নিয়ে জেনে না জেনে প্রেমে ও পড়েছে অনেকবার। দুটি ঘটনা ছোট করে গল্পে তূলে ধরা যাক।

ঘটনা-১
মোবাইল ফেসবুক ব্যাবহার করে পিন্সের একজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়। তার নাম রতন। ঢাকা কলেজে বোটানি তে থার্ড ইয়ারে পড়ছে। প্রথম দিন থেকেই প্রিন্স তাকে বার বার বলেছে সে দেখতে অনেক কালো। তাই তার কপালে সমপ্রেমের কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই ছেলে নাছোড় বান্দা সে বলে আমি ফর্সা, তাই আমি পছন্দ করি কালো। তুমি কালো হও আর যাই হও তোমাকে আমার ভালো লেগেছে তাই ভালোবাসি তোমাকে। তার মিষ্ট কথায় পিন্সের চিড়া ভিজে গেল। অবশেষে টি.এস.সি তে দুজনে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলো, দেখা হল। রতন দেখতে সত্যি সুন্দর। প্রিন্স মনে মনে ভাবল, যাক এত দিনে আমার একটা থিতে হল। হাজারো খারাপ মানুষের ভিড়ে এখনো ভালো মানুষের অবস্থান তাহলে আছে। ভালো ভালোই তার থেকে বিদায় নিয়ে হলে ফিরল পিন্স। রাতে রতনকে ফোন দিয়ে বার বার টাই করে, সে ফোন ধরে না। শেষে একটা টেক্সট এলো রতনের কাছ থেকে।
“বলি কালো হবার ও তো একটা জাত আছে নাকি? এত কালো হবে ভাবিনী। আর বাসায় এসে চিন্তা করে দেখলাম তোমার সাথে আমাকে যায় না। তাই বিদায়” 

ঘটনা-২
প্রিন্সের রুমমেট তানভীর, তার বাল্য বন্ধু জহির ইতালিতে থাকত। রুমে থাকা অবস্থায় প্রিন্স দুই বন্ধুর মোবাইল কথোপকথন সবসময় শুনত। এক দিন তানভীর মোবাইল ভুলে বাসায় ফেলে বাহীরে চলে যায়। এ দিকে জহির বার বার কল করে যাচ্ছে। প্রিন্স বাধ্য হয়ে ফোন পিক করে তাকে জানালো, তানভীর বাহীরে। তখন তার সাথে পরিচয় হয় জহিরের। মিনিট দুই কথা চলে তাদের। এরই মাঝে জহিরের প্রিন্সের কণ্ঠ ভীষণ ভালো লেগে যায়। তাই মাঝে মধ্যে তানভীরের সাথে কথা বলার সময় প্রিন্সের সাথে ও কথা হত। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব। জহিরের অনুরোধে প্রিন্স তার মোবাইল নাম্বার দেয় তাকে। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয় তাদের সম্পর্ক। তানভীর হল ছেড়ে তাদের কাঁটাবনের বাসায় উঠে যায়, তারপর ও প্রিন্স আর জহিরের সম্পর্ক আগের মতই থাকে। রতন প্রিন্সের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার পর প্রিন্স প্রতিজ্ঞা করেছিল। আর কারো প্রেমে পড়বে না। প্রেম ভালোবাসা সবার জন্য নয়। সে হল মহুয়া ফুল, যেটা কোন দেবতার পূজায় লাগে না। কিন্তু জহিরের সাথে কথা বলে সে তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনি। পিন্স আবার প্রেমে পড়ে। নচিকেতার গানটার মত, “একটা হৃদয় একবার নয় বারবার প্রেমে পড়ে”
বছর খানিক পরে জহির দেশে ফীরে আসে। প্রিন্স ইতিমধ্যে অনার্স শেষ করে ফেলে। মাস্টার্স এ ভর্তি হয়ে সে একটা পার্ট টাইম চাকরী করছে মহাখালীর এক কল সেন্টারে। হল ছেঁড়ে সে এখন ফার্মগেটের রাজাবাজারের এক মেসে উঠেছে। জহির ঢাকা পৌঁছে পিন্সের সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। প্রিন্স তাকে সেজান পয়েন্টের সামনে আসতে বলে।
প্রিন্স মাহবুব প্লাজা আর সেজান পয়েন্টের মাঝের গলিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে জহিরের জন্য। প্রিন্স জহিরকে আগে দেখেছে তানভীর আর সে যখন দেশে ছিল তখনকার একটা ছবিতে। কিন্তু জহির প্রিন্সকে দেখেনি। তাই প্রিন্সকে জিজ্ঞাস করে নিলো, কি পরে আছো তুমি? প্রিন্স জানালো সে একটা কালো টি-শার্ট আর ব্লু জিন্স পরে আছে। আধা ঘণ্টা দাঁড়ীয়ে থেকে জহিরের মোবাইলে কল দিল প্রিন্স। জহির ফোন ধরে না। প্রিন্স ভাবছে হয়তো সে ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেছে। আরও ঘণ্টা খানিক অপেক্ষা করে আবার কল করল জহিরকে। এইবার তার মোবাইল বন্ধ।

প্রিন্স বুঝতে পারছে সে আবার ও প্রতারিত হয়েছে। তার গায়ের রঙ এ সে বোধহয় ইতস্তত বোধ করে না দেখা করেই ফালিয়ে গেছে। প্রিন্স আবার ভাবতে থাকে কত বোকাই না সে, খুব সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে আর ঠকে। অথচ এই জহির তাকে অনেক বার বলছে, বিদেশীদের সাদা চামড়া তার অসহ্য লাগে। তার কালো ভালো লাগে। পিন্স বুঝতে পারে, অনেক সুন্দর মানুষের মন পাতিল-তলার চেয়ে ও কালো। পিন্সের গায়ের রঙ অনেক কালো সে তাকে বার বার বলেছে। তারপর ও সে সম্পর্কে জোড়াল। আর আজ তাকে দেখে ফালিয়ে গেল। প্রিন্স ভাবতে থাকে সম্পর্ক থাকবে না থাকবে সেইটা পরের ব্যাপার, একজন মানুষ এতক্ষণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য, বিন্দু মাত্র মনুষ্যত্ব যদি তার কাছে থাকত, তাহলে না দেখা করে পালাত না। আসলে তথাকথিত অনেক সুন্দর মানুষেরই ভিতরটা ভীষণ অসুন্দর। কিন্তু আফসোস তাদের সহজে চেনার উপায় মানুষের অজানা।

ঐ দিন থেকে সে রীতিমত কসম কেটে প্রতিজ্ঞা করল, সে জীবনে ও আর কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে না। আসলে কি তাই? মানুষ কি পারে তার সব প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে। হুমায়ূন স্যার বলেছিলেন, “মানুষ প্রতিজ্ঞা করে প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গার জন্য”
প্রিন্স মাস্টার্স শেষ করে সুন্দর ভয়েসের সুবাদে বাংলালিংক এর কাস্টমার কেয়ারে চাকরী পেয়ে যায়। সে এখন আগের মত সহজে কাউকে বিশ্বাস করা থেকে বিরত। তাই চাকরী আর পরিবারের মধ্যে তার জগতটা সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা বেশী দিন ধরে রাখতে পারেনি। ২০১১ এর শেষের দিকের কথা।
এক কাস্টমার বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে। ফোনটা পিক করে পিন্সের সহকর্মী ইভা। ভদ্রলোক ফোন ধরেই ইভাকে অভদ্র ভাষায় যা ইচ্ছে তাই বলল। ইভা কিছুতেই তাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। তার নাকি মোবাইল ব্যালেন্স বেশী কাটা হয়। এর আগে ও অনেক বার কমপ্লিন করেছে। কিন্তু তার সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। তাই আজকে সে অতিরিক্ত গরম। যদি তার হাতে একটা এটম বোম থাকত তাহলে সেইটা কোন হিরোশিমায় না মেরে বাংলালিংক এর ভবনে মারত। ইভা আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে কলটা প্রিন্সের কাছে টান্সফার করে। কারণ সবাই জানে প্রিন্সের সুমিষ্ট কণ্ঠের যাদু দিয়ে যে কোন মানুষকে বশে আনতে মিনিট খানিক লাগে। প্রিন্স কল ধরে বলল,
-বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার থেকে প্রিন্স বলছি, আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?
কাস্টমার এইবার তার মুখে একটা গালি ঠিক করে সবে মুখ খুলবে, হঠাৎ করে তার রাগের জ্বলত শিখা নিবে গেল। ৫ মিনিটের মধ্যে প্রিন্স কাস্টমার কে বুঝিয়ে কলা দেখিয়ে লাইন কেটে দেয়। কিন্তু ঐ দিন লাইন কাটলে ও সেই কাস্টমার তার পিছু ছাড়েনি। সময় অসময় কাস্টমার কেয়ারে কল করে প্রিন্সের সাথে খোস গল্প করতে চায়। প্রিন্স প্রথম থেকেই তাকে অবহেলা করে আসছে। কিন্তু প্রতিদিন ফোন করে তার কাজের ১২টা বাজাচ্ছে দেখে একদিন নিজের মোবাইল থেকে তাকে কল করে বলল,
-ঐ মিয়া আপনার সমস্যা কি?
-আমার কোন সমস্যা নাই।
-তাহলে সময় অসময় অকাজে ফোন করেন কেন?
-আপনার কণ্ঠ আমার ভীষণ ভালো লাগে।
-তো আমি কি করতে পারি আপনার জন্য?
-কিছু না, এই যে এখন যেমন কথা বলছেন, এই ভাবে রোজ কথা বললেই চলবে? 
-মাথা খারাপ নাকি?
-হুম ঠকই ধরেছেন, অনেকটাই সে রকম।
প্রথম দিন প্রিন্স তাকে যতটা খ্যাত মনে করেছে সে ততটা খ্যাত নয়। ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে কথা বলে, সাথে কবি সাহিত্যর ছোঁয়া ও আছে।
প্রিন্সের মোবাইল নাম্বার পেয়ে লোকটা আকাশের চাঁদ হাতে পেল। রাত নেই, দিন নেই প্রিন্সের মুণ্ডু ভেঙ্গে একাকার। কথায় কথায় জানতে পারল তার নাম ফারহান। দুবছর যাবত ব্যবসা করছে ঢাকাতে। পিন্স পাগল সামলানোর জন্য তাকে বন্ধুত্বের অপার দেয়। সে অকপটে তা কবুল করে নেয়। ঐ বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে রাতে একবার কলে কথা বলতে হয় প্রিন্সকে। ছয়মাস দুজন দুজনকে ফোন জানে। কিন্তু দেখা করার চিন্তা ও করেনি প্রিন্স। এক পর্যায়ে পিন্স বুঝতে পারে ফারহান তার মাঝে জায়গা করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। তার আগের দুটো অভিজ্ঞতার কথা মনে করে সে ফারহান কে বুঝিয়ে বলল, তার সাথে কথা বন্ধ করতে। কিন্তু ফারহান নাছোড় বান্দা, কথা না বলে থাকতে পারে না। অবশ্য প্রিন্সের ও একই দশা। প্রিন্স বুঝতে পারে ফারহান তার কাছে কি চায়, কিংবা তাদের সম্পর্কটা কোন দিকে মোড় নিতে পারে। তাই একদিন প্রিন্স ফারহানকে যেচে এসে তার অতীতের কষ্টের কথামালা শোনায়, ফারহান গম্ভীর হয়ে তাকে জানায়, দুনিয়ার সব মানুষ সমান নয়। তবে হ্যাঁ সে নিজে ও দেখতে ফর্সা, মাঝারী ধরনের ২৮ বছরের যুবক। তবে তার মাঝে বর্ণ নিয়ে কোন চুলকানি নেই। তার কাছে মানুষ শুধু মানুষ। তার কথা শুনে প্রিন্স নিজেকে আরও সতর্ক করে দেয়, আগের মত আবার ভুল করতে যাচ্ছে সে। তাই ফারহানকে অনেক কটু কথা বলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে পিন্স। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। ফারহান আগের মতই তার সাথে কথা বলে যায়। একদিন প্রিন্স খুব শান্ত ভাবেই তার সাথে আলোচনা করে বুঝাতে চেষ্টা করল, 
-দেখ ফারহান, ইচ্ছে করলেই আমরা যা চাই তা করতে পারি না। 
-মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করতে পারে?
-আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে বুঝাতে চাই, তুমি আমাকে বিরক্ত না করে তোমার মত কাউকে খুঁজে নাও। আমি কোন দিন ও তোমার সাথে দেখা করব না। সাদা চামড়ার প্রতি আমার অনেক রাগ বুঝলে, কারণ সাদা চামড়ার মানুষ রূপী কিছু পশুকে চিনতাম, তারা আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছে, রঙ সুন্দর হলেই মন সুন্দর হয় না।
-প্রিন্স আমি তোমার কথা অস্বীকার করছি না, সব সাদা চামড়ার মানুষ কিন্তু খারাপ নয়। শুধু সেই ভালো মানুষ গুলোকে খুঁজে নিতে হয়।
-দুঃখিত মশাই। আমার কোন সখ নাই কাউকে খোঁজার।
-প্রিন্স তোমাকে কিছু কথা বলি রাগ করবে না, ছেলে বেলা থেকে তোমার গায়ের রঙ নিয়ে তুমি অসন্তুষ্ট ছিলে। তাই ফর্সা মানুষদের তুমি অযাচিত ভাবেই ঘৃণা করতে। আর তোমার সেই ঘৃণাকে তেলে বেগুন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল, রতন আর জহির। প্রিন্স তুমি উচ্চশিক্ষিত একটা ছেলে বাস্তব সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা কর, তোমার জীবনে একটা দিন ও কি ছিল, যে দিন তুমি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলে? একদিনের জন্য ও কি নিজের কালো রঙ মেনে নিয়ে নিজেকে ভালবেসেছিলে? একটা দিনের জন্যও কি নিজেকে সম্মানের আসনে বসিয়েছিলে? যে নিজেকে ভালোবাসে না, যে নিজেকে সম্মান করতে জানে না, সে কি ভাবে অন্যর ভালোবাসা প্রত্যাশা করে?

প্রিন্স কথা গুলো ভাবতে লাগল, আসলে ও তাই। সে কোন দিন ও নিজেকে নিয়ে সুখী ছিল না। তাই বোধহয় সুখ নামের পাখীটা তার জীবনে ধরা দেয়নি। নিজেকে অন্যর কাছে ছোট করা থেকে উদ্ধার করতে মাথার মধ্যে কিছু যুক্তি ঠিক করে আবার উত্তর দিল ফারহান কে? 
-ফারহান, আমি ও তোমার কথা অস্বীকার করছি না। হ্যাঁ হয়তো তুমি রাইট, আচ্ছা তুমি কি আমাকে একজন স্মার্ট, হ্যান্ড-সাম মানুষ দেখাতে পারবে, যে নিজেকে নিয়ে বিন্দু মাত্র অহংকার মনে পুষে রাখে না? যে কোন দিন একটি বারের জন্য ও ভাবেনি, সে আট দশ জন থেকে উন্নত প্রজাতির কেউ একজন। হয়তো হাতে গোনা দু একজন ভিন্ন হতে পারে, তারা হয়তো মানুষের ঊর্ধ্বে। তা না হলে পৃথিবীর সব মানুষই কম বেশী সুন্দরের পূজারী।
-প্রিন্স, তোমার কথা পুরোপুরি মিথ্যে নয় হয়তো, কিন্তু তাই বলে সবাইকে একই ছাঁচে ফেলে নিজস্ব রঙে রাঙানো কি ঠিক? আগে তুমি নিজেকে শূদ্রাও পরে অন্যকে জাজমেন্ট কর। তুমি আগে নিজেকে মেনে নাও তুমি যা তাতেই হ্যাপি। দেখবে তুমি আবার মানুষকে বিশ্বাস করতে পারবে। দেখবে তোমার জীবনে একজন আসবে যে তোমার ভিতরের সব কষ্ট নিজের করে তোমাকে হাল্কা করে দিবে। কালো যদি না থাকত তাহলে মানুষ সুন্দরের মর্ম বুঝত না। কালো মটেও কুৎসিত নয়, দেখ কবি কি বলেছেন, 
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দাতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি| 
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়|

প্রিন্স কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবতে থাকে ফারহানের কথা গুলো, তারপর বলে, 
-হয়েছে হয়েছে, মৃত জসীমউদ্দিন সাহেব কে নকশী কাঁথার মাঠ থেকে এই ঢাকা শহরে টেনে না আনলে ও চলবে। আর সত্যি কথা বলতে কি, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সভ্য আধুনিক মানুষগুলো কম বেশী বর্ণবাদে বিশ্বাসী, যদি সবাই নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদে বিপক্ষের কথা গুলো বুঝতে পারত, তাহলে কালো সাদার জন্য বিশ্বের কিছু মানুষ এখনো প্রাণ হারাত না। 
ঐ দিনের পর থেকে প্রিন্স অনেকখানি বদলে যেতে লাগল, সে নিজেকে একসেপ্ট করতে শিখল, সে কালো, সে যা আছে তাই ভালো। সে সমকামী সেটাও ও মেনে নিলো। এখন আর আগের মত তার মন খারাপ হয় না। এ দিকে ফারহানের সাথে সম্পর্কটা ও জমে গেল। কিন্তু দেখা করাতে প্রিন্সের যত আপত্তি। ফারহান হাজার বার বলেছে দেখা করার জন্য, কিন্তু প্রিন্স ঐ একই কবিতা পড়ে দিয়েছে। দেখা সে করবে না। 

দুই বছর হয়ে গেল তাদের বন্ধুত্ব হোক আর ভালোবাসা হোক এখনো টিকে আছে। এক রাতে মোবাইলে কথা বলছে ফারহান। প্রিন্স তার বাসায় শুয়ে আর ফারহান তাদের ডুপ্লেক্স বাড়ীর দোতলার সিঁড়িতে হাঁটতে হাঁটতে। হঠাৎ করে পা মোচড় খেয়ে পিছলে পড়ে যায় ফারহান। এ দিকে প্রিন্স হ্যালো হ্যালো করছে, কোন কথা নাই। প্রিন্স বুঝতে পারে ফারহানের কোন প্রবলেম হয়েছে, কিন্তু সেইটা কি বুঝতে পারছে না। বার বার কল কেটে, কল করছে। কেউ ধরছে না। সে কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। ফারহানের সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিল না বিধায় তার বাসার ঠিকানাটা কোন দিন ও জানতে চায়নি প্রিন্স। বারান্দায় আর ঘরে পায়চারি করতে লাগল, রাত সাড়ে চারটার দিকে প্রিন্সের মোবাইলে কল দিতেই কে যেন মোবাইল ধরল,
-হ্যালো ফারহান। 
-ফারহান ভাইজান তো হাসপাতালে।
-কি হয়েছে তার, আপনি কে?
-আমি হেগো বাড়িত কাম করি।
-ফারহানের কি হয়েছে সে কোন হসপিটালে আছে? 
-ভাইজান রাইতের বেলা কার লগে কতা কইতে গিয়ে ঠেং পিছলাইয়া পইরা গেছে। হেয় অখন সেন্ট্রাল হসপিটালে আছে।
প্রিন্স বুঝতে পারছে না কি করবে? এই ভোর রাতে হসপিটালে যাবে নাকি সকাল বেলায়?
মনের সাথে যুদ্ধ করে সে সিদ্ধান্ত নিলো এখন নয় রাতে হয়তো তার পরিবারের সবাই আছে ওখানে এ অবস্থায় গেলে তার জন্য অস্বস্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সকাল ১০টা নাগাদ হাতে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে সেন্ট্রাল হসপিটালে আসে প্রিন্স।

ফারহান চোখ বন্ধ করে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। তার মা তার পাশেই বসে আছে। উনার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে উনি অনেক কেঁদেছেন। প্রিন্স ফারহানকে যত টা সুন্দর মনে করেছিল ফারহান তার থেকে কয়েক গুন বেশী সুন্দর। মনে হচ্ছে সাদা বিছানায় ফর্সা এক দেবদূত শুয়ে আছে। প্রিন্স কেবিনের এক কোনে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়ীয়ে আছে। ফারহানের মা তাকে আস্তে করে ডেকে তুলল,
-ফারহান তোর সাথে এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছেন।
ফারহান চোখ খুলে প্রিন্সের দিকে তাকায়। প্রিন্স কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে যায়, আবেগে সে বাকযুদ্ধ হয়ে যায়। ফারহান মুখে এক চিলতে হাঁসি এনে চোখের ইশারায় তাকে বসতে বলে। আর সে যে প্রিন্স, এক নিমিষে ফারহান বুঝতে পারল। প্রিন্স ভাবছে, এই দেবদূতের সাথে সে সম্পূর্ণ রূপে বেমানান। আর তাকে দেখে আগের দুজনের মত ফারহান ও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিবে। তাতে প্রিন্সের কিচ্ছু যায় আসে না। সে এখন নিজেকে ভালোবাসে, সে জানে মানুষের সৌন্দর্য গায়ের রঙে নয়, তার ব্যক্তিত্বে আর মনুষ্যত্বে। ফারহান মাকে বলে,
-মা উনার সাথে আমার প্রাইভেট কিছু কথা আছে। যদি কিছু মনে না কর তুমি কি কিছুক্ষণের জন্য বাহীরে যাবে?
ফারহানের মা কিছু মনে না করে বলে,
-শিউর, তোরা কথা বল আমি বাহীরে থেকে হেঁটে আসি।
ফারহানের মা কেবিন থেকে বের হওয়ার আগে প্রিন্সকে বলে,
-একি বাবা তুমি দাঁড়ীয়ে কেন? চেয়ারটা টেনে বস।
ফারহানের মা চলে যাওয়ার পর, দুজনের কোন কথা নেই। শুধু প্রিন্স সাথে করে আনা ফুল গুলো ফারহানের দিকে বাড়ীয়ে দিল, বিনিময়ে ফারহান তাকে থ্যাংকস বলে।
ফারহান প্রথম নীরবতা ভেঙ্গে মুখ খুলে,
-কেমন ছিলে?
-জানি না।
-কেন জানো না?
-কি জন্য যে জানি না তাও ও জানি না।
-প্রিন্স তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এখন নিজেকে ভালবাসতে শিখেছ। তোমার মাঝে একটা আত্মবিশ্বাসের আবাস দেখতে পাচ্ছি। আমি কি রাইট? 
-জানোই যখন, তখন জিজ্ঞাস করছ কেন?
-তোমাকে ইজি করতে। কারণ আমাকে দেখে তুমি একটা শঙ্কায় আছো, আমি তোমাকে একসেপ্ট করি কি না করি। এম অ্যাই রাইট?
-জানোই যখন তখন প্রশ্ন করে বিব্রত করছ কেন?
-ইচ্ছে করে। গত দুইবছর সময় লেগেছে তোমাকে দেখতে। প্রিন্স তুমি কি জানো তুমি দেখতে সত্যি অনেক সুন্দর।
প্রিন্সের চোখে কোণে পানি জমে গেল ফারহানের কথা শুনে। তার জীবনে এই প্রথম কেউ তাকে সুন্দর বলেছে সেইটা কটাক্ষ করে নয়। প্রিন্স বলে,
-আর কিছু?
-হুম আরও অনেক কিছু, ওত দূরে কেন? কাছে এসে বস।
প্রিন্স দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে ফারহানের কাছ ঘেঁষে বসে। ফারহান তার একটা হাত দিয়ে প্রিন্সের একটা হাত বুকে চেপে ধরে বলে,
-প্রিন্স তোমাকে দেখার পর ও আমি তোমাকে ঠিক আগের মতই ভালোবাসি। তোমার রঙ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আমি তোমাকে ভালবেসেছি না দেখেই। আর তোমাকে তোমার জন্যই ভালবাসতে চাই। তুমি যা আছ, তার জন্যই ভালবাসতে চাই। একদিনের জন্য নয়, যুগ যুগ ধরে ভালোবেসে ও আমি ক্লান্ত হব না প্রিন্স। অ্যাই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইয়উ।

ফারহানের কথা শুনে আবেগে প্রিন্স নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ঝাঁপিয়ে পড়ে ফারহানের বুকের উপরে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁপে উঠে পিন্সের বুক। কাল সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ফারহান বাম হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পায়। হাতটা চাদরে ডাকা, তাই প্রিন্স দেখতে পায়নি। প্রিন্স জড়িয়ে ধরাতে ফারহান ব্যথা পাচ্ছে তারপরে ঐ ব্যথা নিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে প্রিন্সকে। কারণ ফারহান আগেই বলেছে তার সমস্ত ব্যথা সে নিজের করে নিবে।

অবশেষে প্রিন্স খুঁজে পেল তার সত্যিকারের ভালোবাসার রঙ। ফারহান তার সারা জীবন রাঙিয়ে রাখবে তাকে রঙধনুর সাতরঙে। সত্যিকার প্রেমিক কখনো রঙ নিয়ে ভালোবাসার বাণিজ্য করে না। ভালোবাসা তো স্রেফ ভালোবাসাই হয়, ওতে কালো আর সাদার তফাৎ খুঁজতে যাওয়া কোন সত্যিকার প্রেমিকের কর্ম নয়।

Thursday, 27 February 2014

লস্ট ইন প্যারাডাইসহট বয় নই লোয়ান

অদ্ভূত নামের কিছু সাধারন চরিত্রের মাধ্যমে পরিচালক নাগক ডাং ভূআমাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন আমাদের জীবনবোধ, বোঝাতে চেষ্টা করেছেন সমকামি জীবনের অপ্রিয় সত্য। ভিয়েতনামের এই পরিচালক তার নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে সমকামীদের জীবনের যেই চিত্র তুলে ধরেছেন তা সারা বিশ্বে একই রকম। আমি ভিয়েতনামিজ ভাষা বুঝেন না, তাতে কি সাবটাইটেল তো আছেই। মুভিটিতে প্রতিটা চরিত্রের অভিনয় এত শক্তিশালী যে একটি বারের জন্যও আমার সাবটাইটেলের দিকে তাকাতে হবে নাভিনদেশী ভাষায় নির্মিত এই মুভিটি মনের সাথে সাথে আত্মাকে ছুঁয়ে যাবে।

গল্প সংক্ষেপঃ
নিজের সমকামীতার কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবার কর্তৃক বিতাড়িত এক যুবকের থাইল্যান্ড শহরের নিজের অস্তিত্ব খোঁজার গল্প হচ্ছে এই মুভির প্রধান কাহিনীকে
শহরের মানুষের তার সাথে ধোকাবাজি আর ভালোবাসার মানুষের ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত সবকিছু কিভাবে এক সমকামী যুবকের ভাগ্য নির্ধারন করে তাই অভিনব কৌশলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।
খই
 
আমি খই। এই মুভির প্রধান চরিত্র। আমাকে ঘিরেই সিনেমাটির সমস্ত কাহীনি আবর্তিত। নিজ গ্রামে সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় পরিবার এবং সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভাগ্য অন্বেষনে চলে আসি শহরে। থাকার একটি যায়গার জন্য হন্যে হয়ে যখন ক্লান্ত তখন ডং আমাকে তার সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করার প্রস্তাব দেয়। শহরে এসেই এমন বন্ধ্ত্ব আমি কখনই আশা করিনি। নিজের ভিতর এত ভালো লাগে যে এক প্রস্তাবেই রাজি হয়ে যাই। আমি জানতাম না এই বন্ধুত্বের পিছনে কতবড় প্রতরনা লুকিয়ে ছিলো। আমি যখন নিজের অংশের ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকা চুকিয়ে তাদের প্ল্যান মত বাথরুমে গোসল করতে যাই তখন ডং আর তার প্রেমিককে আমার সব জিনিসপত্র দিয়ে প্রথমে ঘর থেকে বের করে দেয় আর তার পর খুব কৌশলে বাথরুমে ঢুকে আমার কাপড় চোপড় নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরনে কোন বস্ত্র না থাকায় আমি তাদের পিছনে যেতে পারিনা। শহরে এসে এই প্রতারনায় নিজের মন ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে যায়। মানুষ এতবড় প্রতারক এবং অমানুষ হতে পারে আমার জানা ছিলোনা। পরনে কাপড় নাই, থাকার যায়গা নাই, পেটে খাবার নাই, এমতাবস্থায় কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলোনা। লেগে গেলাম দিন মজুরীতে। সামান্য মজুরীতে নিজের পেট ভরাব মত কিছু টাকা জোগাড় করেই দিন পার করছি এখন। আপাতত এখানে আমার কথা বিরতি দিয়ে চলুন শুনি আমারি মত প্রতারিত লেমএর কথা...
 

লেম
আমিও খই এর মত প্রথম যেদিন এই শহরে আমি তখন খুব অসহায় ছিলাম। নিজে সমকামী ছিলাম তাই আরেকজন সমকামীকে চিনে নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লাগেনি। যেই সমকামীর সাথে আমি নিজেকে নিরাপদ ভেবেছিলাম সেই যে আমাকে তার লালসা আর ব্যবসার উপকরণ বানাচ্ছে তা বুঝতে পারি অনেক পরে। আর সব সমকামীর মত আমিও সরল বিশ্বাসে আমার সকবিছু দিয়ে ভালোবেসেছিলাম ডং কে। আর ডং আমার সাথে শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছে। তার ভালোবাসার জন্য হেন কোন কাজ নেই যা আমি করিনি। নিজে একজন ভালোবাসার মানুষ থেকে খুব সহজেই বেশ্যা হয়েছি। সাধারন মানুষকে পদে পদে ঠকিয়েছি। যার মধ্যে খই ও একজন। আমি ডং কে অনেক ভালোবাসি তাই কখনো ওর শত অত্যাচার এবং অন্যায় কাজকর্ম দেখার পরও ছেড়ে যেতে পারিনি। উপরন্তু সঙ্গ দিয়েছি দিনের পর দিন। কিন্তু খই এর সাথের প্রতারনা আমাকে বদলে দেয়। আমাকে অনেকদিন পর সাহস যোগায় প্রথম প্রেম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে। আমি ডং এর সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও তার কাস্টমার নেটওয়ার্কে মাধ্যমে সে আমাকে খুঁজে কোন না কোনভাবে বের করেই ফেলে। তাই পালাতে গিয়েও তার কাছ থেকে রেহাই হয়না আমার।
 

খই
কাজ করতে করতে ছাদ থেকে পড়ে নিজের এক হাত এবং এক পা জখম করে রাস্তায় বসে যাই আমি। নিজের জীবনের কাঝে যখনই হারতে বসব তখনই লেমকে দেখে নিজের ভিতরের অনেক দিনের জমানো ক্রোধ জমা হয়ে আগ্নেয়গিরি হয়ে বের হয়ে আসে। আহত শেয়ালের মত বাঘের উপর ঝাপিয়ে পড়ি। আমি জানি তার সাথে আমি পেরে উঠবোনা, তাও মনকে কোন ভাবে সামলাতে পারিনি। যাই হোক, লেম তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায় এবং নিজের ভূল শোধরানোর জন্য আমাকে তার সাথে বাসায় নিয়ে যায়। আমাকে সেবা সুশ্রুষা করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে
প্রথম দিন থেকেই তার আদর যত আর বিশ্বস্ততায় ভালোবেসে ফেলি তাকে। মন থেকে, প্রাণ থেকেও।

লেম
আমিও তোমাকে ভালোবাসি খই, তবে বলতে পারছিনা কেমন ভালোবাসা এইটা। জীবনে এত প্রতারণা দেখেছি যে ভালোবাসা নামক শব্দটা থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। প্রতি রাতে নতুন নতুন খদ্দেরের সাথে দেহ বিকিয়ে মানুষর কুৎসিত চেহারা গুলো এমন ভাবেই মনের ভিতর বসে গেছে যে ভালোবাসা কোনভাবেই সেখান থেকে শুভ্র এক আলো নিয়ে কখনই উঠে আসতে পারবেনা। তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

খই
ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আমি লেমকে তার এই দেহ ব্যবসা থেকে ফেরাতে পারিনি। লেম নিজেকে একজন পেশাদার বেশ্যা হিসেবে দাবী করে। তার মতে এটাই তার ভাগ্য। আর সে এটাকে ছাড়তে পারবেনা। সমকামী জীবনের অনেক রূপ সে দেখেছে, সমকামী জীবনে ভালোবাসা মানেই বিনা খরচে কারো কাছে দেহ ভোগ করার মত। তার ভয় সে এই ব্যবসা ছেড়ে কারো সাথে সৎ জীবন যাপন শুরু করলেও তা খুব বেশীদিন স্থায়ী হবেনা। কখনও না কখনও আমি তাকে তার এই অতিত নিয়ে অপমান করব, আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে এবং অতঃপর তাকে আবারও এই ব্যবসাতেই ফিরে আসতে হবে তাহলে কেনই এই অভিনয় করা। আমি কখনই আমার ভালোবাসা দিয়ে লেমের ভিতর ভালোবাসা নিয়ে যেই ভয় তা ভাঙ্গাতে পারিনি জন্ম দিতে পারিনি এক নতুন আশার। আমার প্রতি তার পূর্ণ ভালোবাসা থাকলেও সে এভাবেই থাকতে চায় আর আমার পক্ষে আমার জীবন সাথীকে আমার সাথে থাকা অবস্থায় অন্য কারো সাথে ভাগ করে গ্রহণ করা কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই তাকে ছেড়ে একটা সাধারন চাকরী নিয়ে নিজের ছুটে যাওয়া পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে শহর থেকে শহরে পাড়ি জমাই।

লেম
খই চলে যাওয়াতে জীবন আমার অন্ধকারের চাইতেও অন্ধকার আর নিরাশার চেয়ে বেশী রকম হতাশায় ডুবে যেতে থাকে। এখন আর নিজের দেহ কারো লালসার বলি করতে ইচ্ছে করেনা। করে প্রতারনার সেই খেলা খেলতে যা সারাজীবন মানুষ নামের অমানুষগুলো আমার সাথে খেলে এসেছে। আমাদের এই ব্যবসায় রাস্তা থেকে কাস্টমাররা তাদের পছন্দমত যায়গায় তুলে নিয়ে আমাদের ভোগ করে। খুব সামান্য টাকাতেই আমাদের ভোগের পণ্য করতে পারে তারা। অনেক সময় আমাদের নিয়ে ভোগের বদলে করে অমানুষিক নির্যাতন। তাই আজ আমিও কোমর বেঁধে নেমেছি তাদের সেই প্রতারণা সুদে আসলে তাদের ফিরিয়ে দিতে। আর আমার এই জীবন ধারনই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।

এই শহরের রাস্তায় ছেলে যৌন কর্মীর সাথে সাথে আছে মেয়েরাও। আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের হলেও মেয়েদের বেলায় তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মেয়েদের যে কোন মহাজনের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হয়। তেমনি একজন যৌন কর্মী ঘানযে কিনা এক টোকাইয়ের ভালোবাসায় নিজের উপর সমস্ত নির্যাতন ভুলে যায়। নিজের মহাজনকে খুশী করতে ঝড় বাদল, শীত অথবা অসুস্থতা নিয়েও কাজ করতে হয়। নিজের মাসিকের সত্যতা প্রমাণ করতে সবার সামনে নিজের কাপড় খুলে প্রমাণ দেখাতে হয় তাকে। কিন্তু নিজের ভালোবাসার উপর যখন কেউ আঘাত হানে তখন সহ্য করতে পারেনা সে। নিজের মহাজন আর মহাজনের রক্ষককে খুন করে কারাগারে চলে যায় সে।



আজ সেই যৌন পল্লী আর যৌন পল্লী নেই সেখানে এই সকল ঘটনার পর গড়ে তোলা হয় অভিনব বহুতল বিপনী বিতান। স্থানান্তরীত করা হয় যৌনকর্মীদের অন্যত্র। কিন্তু এই অভিবাসন কি পারবে যৌনকর্মীদের তাদের পেশা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে। পারবে কি তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিয়ে সরকার সাধারণ জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের? জানি পারবেনা, তবুও মানুষের মিথ্যে অভিনয় দেখতে খুব একটা খারাপ লাগেনা, মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে খুব। সত্যিকারের বিশ্বাস।
 

মুভিটি পরিচালনা করেছেন- নাগক ডাং ভূ
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন- মান হাই লং (লেম), ভিন খোয়া হো (খই)
মুক্তির সাল- ২০১১
মুভিটির দৈর্ঘ্য- ১০৩ মিনিট
আই.এম.ডি.বি তে মুভিটির রেটিং-৬.৬/১০

Sagun

ফিলিপাইনের তাতালান গ্রাম। সমুদ্র তীরবর্তী এই গ্রামটির অধিকাংশ যুবক টুরিস্টদের জন্য নৌকা চালায়। হাড়ভাঙা পরিশ্রম। উত্তাল সমুদ্রের সাথে যুদ্ধে তারা তারা ঢেউকে পরাজিত করতে পারে কিন্তু জীবনের যাঁতাকল থেকে অর্থের অভাবকে দূর করতে পারে না। অর্থের অভাবে পড়ে অনেক যুবকই টুরিস্টদের সাথে যৌন মিলনে রাজি হয়। আমরা যেটাকে সহজ ভাষার বলি পতিতাবৃত্তি। জীবনের এই অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হয় বোট চালক হিসেবে নতুন আসা এক যুবক। নাম আলফ্রেড। আলফ্রেডের কাহিনিই হলো সাগুন। আলফ্রেড নিজেকে গর্বিত মনে করে কারন আজ পর্যন্ত নিজের আর্থিক দৈন্যতায় তাকে কোন টুরিস্টের সাথে তার অন্যান্য বন্ধু এবং সহকর্মী যুবকদের মত কোন অনৈতিক যৌন মিলনে মিলিত হতে হয়নি। কিন্তু একসময় চতুর্দিকের চাপ তাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দেয় এই ব্যাপারে।

তার মহাজন, সহকর্মী এবং বন্ধু ঈমান ও তাকে এই যৌন ব্যবসার মুনাফা বুঝাতে উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু যতই সময় যায় আলফ্রেড এই ব্যাপারটাতে আরো বেশি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। আলফ্রেডের জুয়াখোর বাবার জুয়ার টাকা তাকেই যোগান দিতে হয়। ফেরী করে যা উপার্জন তা দিয়ে তো সংসার চালানোই মুশকিল। তার উপর তার গার্লফ্রেন্ড মুখিয়ে আছে তার সাথে এক মিলিত হবে এই আশায়
কিন্তু আলফ্রেড সবদিকে তালমিলিয়ে চলতে পারছেনা।  এভাবে তো আর জীবন নৌকা মাঝ নদীতে রেখে জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না, জীবনে সামনে এগুতে হলে তরী পাড়ে ভিড়ানো দরকারআলফ্রেডকেও তাই করতে হবে। তার আশেপাশে যেই সহকর্মী বন্ধুরা আছে তাদের যৌণ ব্যবসার মজা এবং কাঁচা টাকা তাকে ক্রমশই এই ব্যাপারে ভাবাতুর করে ফেলে। 



একসময় যৌনতায় অনভিজ্ঞ আলফ্রেড তার গার্লফ্রেন্ডের চাহিদায় সাড়া দিলেও একই সময়ে ঈমানের জন্য তার যেই সমকামী অনুভূতি সেটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। তার মাথার ভিতরে সেক্স সম্বন্ধে পুরনো এক ভয়ংকর হত্যার কাহিনীইকি আলফ্রেডকে তার সেক্সুয়ালিটি সম্বন্ধে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে বাধ্য করছে নাকি তার নিজের ভিতরের নিজেকে সে এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা?
 

মুভিটি পরিচালনা করেছেন- মন্টি পারুনগো
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে- রায়ান দুনগো (আলফ্রেড) এবং ডেনিস টুরোস (ঈমান)
মুভিটি মুক্তির সাল- ২০০৯
মুভিটির দৈর্ঘ্য- ১০১ মিনিট
আই.এম.ডি.বি তে রেটিং- ৫.৯/১০

The Man Next Door

মজার কিছু সময় কাটানোর জন্য কমেডি মুভি এর তুলনা চলেনা। ‘’The Man Next Door ‘’ তেমনি একটি কমেডি মুভি যেখানে ডিরেক্টর এবং লেখক ‘’ রব উইলিয়ামস ’’ খুব সহজেই GAY জীবন এর Confusion কে অনেক মজার কাহিনীর মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। Eric Dean, Michael Nicklin, Benjamin Lutz কাহিনীর প্রধান তিন চরিত্র। অসাধারন অভিনয় করে মুভিটিকে দিয়েছেন নতুন এক মাত্রা। মুভিটি যেমন দর্শক উপভোগ করবেন,তেমনি মানব চরিত্রের কিছু উদ্ভাসিত দিক সম্পর্কে ভাবার প্রয়াস পাবেন।


কাহিনীর শুরু হয় এরিক এর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে।ভুল করে এরিক এর পারসেল চলে যায় পাশের বাসায়।সেই পারসেল ফেরত দিতে এসে নাটকীয় ভাবে এরিক এর জীবনের সাথে জড়িয়ে পরে বেঞ্জামিন।৪০ বয়স্ক এরিক এবং ৩০ বয়স্ক বেঞ্জামিন যখন মাঝে মাঝে একাকি সময় কাটাতে থাকে ঠিক সেই মুহূর্তে আবির্ভাব হয় ৫০ বছরের একজন মানুষের যে এরিকের পূর্ব পরিচিত। এরিকের জীবনের দ্বন্দ্বর শুরু এখানেই। কারন বেঞ্জামিনের অবর্তমানে মাইকেল এবং মাইকেলের অবর্তমানে বেঞ্জামিনের সাথে চলতে থাকে তার প্রেম কাহিনী।এক পর্যায়ে যখন এরিক জানতে পারে বেঞ্জামিন এবং মাইকেল এর মাঝে বাবা-ছেলে সম্পর্ক বিরাজমান,তখন তিন জনের মাথাই বাজ পরে।
ঘটনা কমেডিতে পরিনত হয় যখন বাবা-ছেলে দুইজন এরিককে লাভার হিসেবে পেতে চায়। একজন এরিকের জন্য চাঁদ আনে ত অন্য জন আনে সূর্য। এভাবে ঘটনা গড়াতে থাকে।সব কিছুর যেমন সমাপ্তি আছে,এক সাথে দুই জনের সাথে Continue করারও সমাপ্তি আছে। বাবা-ছেলে সিদ্ধান্ত নেয় যে এভাবে চলে না এবং এরিক কে যেকোনো একজনকে বেছে নেয়ার কথা বলা হলে এরিক চরম সঙ্কটে পরে। কারন এরিকের কাছে দুইজনি সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজনকে ছেড়ে অন্যজন কে সে কল্পনা করতে পারে না। দুইজন এরিক কে ছেড়ে চলে যায়। এভাবে কিছু সময় যাবার পর এরিক সঠিক একটি সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। বেছে নেয় একজনকে,কে সে.....................জানতে হলে দেখতে হবে বন্ধুরা ‘’The Men Next Door’’


মুভিটি মুক্তির সাল- ২০০৯
মুভিটির দৈর্ঘ্য সময়ের হিসেবে ৮৪মিনিট
আই.এম.ডি.বি তে মুভিটির রেটিং- ৫/১০
রোটেন টমেটোতে মুভিটির রেটিং- N/A

গন বাট নট ফরগটেন

ভালোবাসার এক কমপ্লিকেটেড কাহিনীর উৎকৃষ্ট উদাহরন গন বাট নট ফরগটেনমুভিটি। এই কমপ্লিকেসি বাইরের নয়, ভিতরের। যা অন্যকে বোঝানো অসম্ভব আর নিজেই এর সমাধান বের করা দুঃসাধ্য।

ড্রু (আরন অর) একজন ফরেস্ট রেনজার যে মার্ক (মেথিউ মনটেগোমারি) কে খুঁজে পায় এক ঝরনার পাশে যেখন সে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে পিছলে পড়ে। ড্রু তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং তার সেবা সুশ্রষা করতে থাকে। জ্ঞান ফিরে পেতেই দেখা যায় মার্ক তার সব পুরনো স্মৃতি ভুলে বসে আছে। ড্রু মার্ককে পছন্দ করে খুব তাই তার যত
œ নিতে থাকে, তাকে সময় দিতে থাকে এবং তার সময়গুলো উপভোগ্য করে তোলার জন্য যা যা করার দরকার তার সবটুকুই করে। ড্রু মার্কের আরো কাছে আসতে চায় এবং এই ব্যাপারে সে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। 

ডাক্তার তাকে জানায় মার্কের এখন যে অবস্থা তাতে তার শারীরিক সুস্থতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। এখন তার হাসপাতালে থাকা আর না থাকা সমান কথা। মার্কের এখন যা দরকার তা হলো একটা পারিবারিক পরিবেশে সময় কাটানো। পরিবারের সদস্যদের রেগুলার জীবন আচরনে তার স্মৃতি দ্রুত ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ড্রু তার বাসায় এই কথা আলোচনা করলে তার ভাবী তাকে বোঝায় যে মার্কের কাছ থেকে সেই জিনিস আসা করা কখনই ঠিক হবেনা যা মার্ক নয়। তুমি একজন সমকামী বলে মার্কও সমকামী হবে তা যুক্তিহীন। তুমি কষ্ট পাবে। ড্রু প্রচন্ড মন খারাপ করলে তারা রাজী হয়।
 

পরদিন ড্রু মার্ককে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে নিয়ে আসে এবং আসতে আসতে বন বাদাড় ঘুরিয়ে আনে। যেখানে সে মার্ককে বলে এই বনের এক প্রথা আছে যে প্রথা অনুযায়ী পাহাড় থেকে পড়ে বেঁচে যাওয়া ব্যাক্তিকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নিজ হাতে একটা চারা রোপন করতে হয়। মার্ক নিজের পরিশ্রমে একটা চারা রোপন করে প্রকৃতিকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য। বাসায় এসেও গোছালো ড্রু মার্ককে যথেষ্ট হোমলি সময় উপহার দিতে থাকে। মার্ক অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার পুরনো স্মৃতি দুঃস্বপ্নের মত তার প্রতিটা রাতের ঘুম নষ্ট করতে লাগলো। সেদিনও তাই হলো, ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর মার্ক সিড়ি ভেঙে নিচে এসে দেখে ড্রু ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। কিছুটা আস্বস্ত হয় সে এবং ড্রুর কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। দুজন পাশাপাশি বসে গল্প করতে থাকে এবং একটা দুর্বল মুহুর্তে দুজন কাছাকাছি, খুব কাছাকাছি আসে, কিস করে। কিন্তু হঠাৎ মার্ক উঠে চলে যায়, ধীরে ধীরে ধীর পায়ে তার রুমের দিকে। পিছনে হতবাক উৎসুক চোখে তাকিয়ে ড্রু।
 

সকাল হতেই ড্রু অফিসের কাছে বের হয়ে যায় এবং যাওয়ার সময় মার্কের জন্য সমস্ত ইন্সট্রাকশন একটা চিরকুটে লিখে রেখে যায়। ফিরে এসে মার্ক এমন আচরন করতে থাকে যেন রাতে কিছুই হয়নি, মার্কও তাই। দুজনই সহজ এবং স্বাভাবিক। ড্রু তাকে লেকে বেড়ানোর জন্য বললে মার্ক হাসতে হাসতে রাজি হয়ে যায়। দুজন মিলে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ায়া সারাদিন।
 

ড্রু মার্ককে তার বাবা মায়ের ক্যাফে সপ দেখাতে নিয়ে আসে। ড্রু জানায় তার বাবা মা দুজনেই তাদের মানুষ করতে এত সময় ব্যায় করতো যে নিজেদের জন্য সময়ই বের করতে পারতো না, তাই একদিন সে দুজনকে একটা বোট ড্রাইভে লেকে পাঠায় কিন্তু একটা এক্সিডেন্টে তারা আর ফিরে আসেনি। সেখানে কোন উদ্ধার কর্মী ছিলোনা যা তার বাবা মায়ের মৃত্যুর অন্যতম কারন। তাই তারা দুই ভাই সে আর পল ফরেস্ট রেঞ্জারের জব নিয়ে আজ এখানে, যেন আর কারো জীবন কখনো বিপন্ন না হয়। ড্রু তার বাবা মায়ের এই ক্যাফে আবারো চালু করতে চায়। জড়িয়ে রাখতে চায় বাবা মায়ের স্মৃতি জীবন্ত করে সবসময় নিজের সাথে।
 

বাসায় ফিরে দুজন এক সাথে রান্না করে, খেয়ে দেয়ে ফায়ারপ্লেসের সামনে কথা বলার সময় মার্ক জানায় যে তার জীবনে ড্রু এর উপস্থিতিতে সে অনেক হ্যাপি। দুজন দুজনের অনেক কাছে চলে আসে এবং দীর্ঘ সময়ের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের পর প্রথমবারের মত একজন স্ট্রেইট এবং একজন সমকামী পুরুষ খেলায় মত্ত হয়। এরপর যেই সকাল তাদের জীবনে আসে তা এক নতুন রূপ নেয়। দুজন দুজনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ডাক্তারের সাথে রেগুলার চেকাপের দরুন মার্ক জানতে পারে ড্রু একজন সমকামী। ডাক্তার তাকে আরও বলে দেখ মার্ক ড্রু সম্বন্ধে আমি তোমার ফিলিংস বুঝতে পারছি কিন্তু তোমার একটা অতীত আছে যেখানে তোমাকে ফিরে যেতে হবে, তুমি কি সেই জার্নির জন্য নিজেকে তৈরী করছো?
 

মার্ক ড্রু এর সাথে অগনিত অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাতে থাকে। একদিন সকালে পল মার্কের এক্সিডেন্ট স্পটের পাশে একটা প্রাইভেট কার বিদ্ধস্ত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং সেই সূত্র ধরে তার পরিবারকে মার্কের ব্যাপারে অবহিত করে। তারা এসে মার্ককে নিয়ে যায়। ড্রু মার্কের সাথে অভিমান করে আউট অফ দ্যা নেটওয়ার্ক থাকাতে পল মার্কের এই চলে যাওয়া ড্রুকে জানাতে পারেনা। মার্ক তার পুরনো লাইফে ফিরে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে জানতে পারে যে সে একজন সমকামী ছিলো। তার শুধুমাত্র এনগেজমেন্ট হয়েছিলো ক্যাথরিন এর সাথে। যখন ক্যাথরিন জানতে পারে সে একজন সমকামী তখন সে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মার্ক তার সমকামী লাইফের প্রতি সকলের ঘৃণার জবাবে আত্মহত্যা করতে পাহাড়ে চড়ে যেখানে ড্রু তার জীবন বাঁচায়। ড্রু কখনই একজন স্ট্রেইটের জন্য এত কিছু করতো না, তবে কেন সে মার্কের জন্য এত কিছু করেছে কারন মার্ক তাকে কিস করেছিলো এবং সমকামী জানতে পেরেই ড্রু মার্কের কাছে আসার চেষ্টা করেছে। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর মার্ক ক্যাথরিন কে বলে আমি যা ছিলাম এখনও তাই আছি, আমি আমাকে বদলাতে পারবোনা। আমি মার্ককে ভালোবাসি এবং তার সাথেই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

ঘরের সামনে নতুন একটা চারা দেখে মার্ক বুঝতে পারে বাড়িতে কেউ এসেছে কিন্তু সে যে মার্কই হবে তা সে কখনো চিন্তা করেনি। মার্ককে ছাড়া তার এক একটা দিন কি পরিমান একাকিত্ব আর কষ্টে কেটেছে তা সে ছাড়া আর কেউই জানেনা। মার্ক ড্রু এর কাছে ক্ষমা চায় তাকে না বলে বিদায় নেয়ার জন্য। তার অতীত জানার তাগিদ তাকে দ্রুত এই জায়গা ছাড়তে প্ররোচিত করেছে। দুজন দুজনকে আদরে এবং পরম বিশ্বস্ততায় আপন করে নেয়।
 



মার্ক জানতে পারে ড্রু ফরেস্ট রেঞ্জারের জব ছেড়ে দিয়েছে এবং তার বাবা মায়ের রেস্টুরেন্ট ওপেন করেছে পুনরায়। মার্ক বলে কিন্তু তুমি রাধতে জানোনা, ড্রু বলে আমি জানি আমি রাধতে পারিনা, কিন্তু তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমার জীবনের সবচাইতে সুস্বাদু খাবারের স্বাদ আমি শুধু তোমার হাতের রান্নাতেই পেয়েছি। আর আমি এও জানি তুমি অনেক বড় একজন কুক। তাহলে আর চিন্তা কিসের, দুজনে মিলে চালাবো আমাদের স্বপ্নের এই ছোট্ট রেস্টুরেন্ট এবং গড়ব সেই জীবন যার স্বপ্ন এতদিন শুধু ঘুমন্ত দুটি চোখের পাতাতেই ছিলো।

ঊন্ধুরা তোমরা যারা যারা এই মুভিটা দেখনি তারা চরম মিস করেছো। তাই এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনি দেখে নাও গন বাট নট ফরগোটেননামক চরম রোমান্টিক এবং সেনসেশাস এই মুভিটি। 

মুভিটির পরিচালাক- মাইকেল ডি.আকরস
প্রধান চরিত্রে আছেন- ম্যাথিউ মন্টগোমেরি, আরন অর
মুভিটি মুক্তির সাল- ২০০৩
মুভিটির দৈর্ঘ্য-৯৩ মিনিট
ভাষা- ইংলিশ
আই.এম.ডি.বি তে রেটিং- ৫.৮/১০

পৃথিবীর প্রান্তরেঃ ইতালীয় যুবকের আত্মহত্যা।

২৭ অক্টোবর ২০১৩। রোমের পুরাতন একটি পাস্তা ফ্যাক্টরির ১২ তলায়  দাঁড়িয়ে আছে সাইমন। ইতালিয় উচ্চারন সিমোন। সাইমনের বয়স ২১ বছর। সে মেডিকেলের ছাত্র। ইতালির সর্ববৃহৎ সরকারী হাসপাতাল পলিকিলিকো আমবারতো তে সে ইন্টার্নশিপ করছে। পৃথিবীটা আজ সাইমনের কাছে বড় অসহ্য মনে হচ্ছে। মানসিক কষ্ট  তাকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। সে সুইসাইড হটলাইনে অন্তত দশবার ফোন করেছে। কোন কিছুতে সমাধান না পেয়ে সে পাস্তা ফ্যাক্টরির ১২ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। বড় অভিমান করে সে পৃথিবীকে ছেড়ে গেলো। রোমের রাস্তায় সেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালোবাসতো। দলবেঁধে পাস্তা খাওয়ার স্মৃতি নিয়ে টিকে আছে নাস্তার টেবিলগুলো।

৬ নভেম্বর ২০১৩। ইতালীয় পুলিশ সাইমনের আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করতে পেরেছে। সাইমন এন্টি-হোমোফোবিয়া যোগাযোগ কেন্দ্রকে জানিয়েছিলো, “যারা সুইসাইড করেছে আমি তাদের কষ্টগুলো অনুধাবন করছি।”

সাইমনের ফোন কল গুলো গত দুই মাসে ধারণ করা হয়েছে। একটিতে সে জানিয়েছে, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমি যখন করিডোর দিয়ে হেঁটে যাই, আমার সহপাঠীরা আমাকে ফ্যাগট (বিদ্রুপ অর্থে সমকামী) বলে ক্ষেপায়। আমাকে নিয়ে তারা কৌতুক করে।”

আরেকটি ফোনকলে সে জানায়, “আমি এই সব কৌতুক আর বৈষম্যে হতাশ। আমার স্কুল জীবন থেকেই এটা শুরু হয়েছে। হাই স্কুলেও এটা ঘটেছে এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়েও একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে।”

মৃত্যুর আগে সাইমন সুইসাইড নোটে লিখে গেছে, “ আমি সমকামী। ইতালী একটি মুক্ত দেশ কিন্তু এখানে হোমোফোবিয়া (সমকামীদের ঘৃণা করা) আছে। যাদের মধ্যে এই আচরণ আছে তারা অবশ্যই তাদের বিবেকের সাথে বোঝাপড়া করা উচিত।”

রোমের পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেইতালীয় পত্রিকা “কুরিয়েরে দেল্লে সেরা” জানিয়েছে , প্রকৃত অভিযুক্তদের ধরা অনেক কঠিন একটি কাজ।

Photo


সাইমন ঠিক লিখে গেছে। বিবেক দিয়ে মানুষের বোঝা উচিত। অন্যের কষ্টগুলো। অন্যের ব্যাথার জায়গাগুলো। আমাদের সামান্য মজার কারনে যেন অকালে সাইমনদের ঝরে পড়তে না হয় পৃথিবী থেকে।  আমাদের বাংলাদেশে রাতুলেরাও ঝুলে পড়ছে ফ্যানের সিলিং এ। কবে দূর হবে বৈষম্য? কবে প্রতিষ্ঠিত হবে সমধিকার! 

লাইফ উইদাউট লাভ - ২৩

সময় যেন আর কাটে না, বড় একা লাগে ...

দ্বীপ্ত ভাইয়া চলে যাবার পর খুব একা মনে হয়। চারপাশের সেই চিরচেনা মুখ গুলো আগের মতই আছে। তবুও নিজেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত মনে হয়। জন মানুষের মাঝে থেকেও আমি বড় নি:সংগ বোধ করি। শুধু মনে পড়ে সেই মুহুর্তগুলোকে যা আমাকে দিয়েছে কিছু রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আমি দ্বীপ্ত ভাইয়ার দিয়ে যাওয়া শার্টটা পরি। শার্টটা পরলে মনে হয় দ্বীপ্ত ভাইয়া আমাকে আলিংগন করে আছে। আমি তার স্পর্শ পাই, তার শরীরের গন্ধ খুঁজে ফিরি এই শার্টে। আমি মিয়াভাইয়ের ঘরের তালা খুলি। আমার প্রথম মিলনের সাক্ষী এই পালংক খাট। আমি খাটের উপর শুয়ে থাকি। বালিশে মাথা রাখি। দ্বীপ্ত ভাইয়ার ব্যবহার করা বালিশে চুমু খাই। চোখ ফেটে জল আসে। একা একা কাঁদি।

বিকেলের হেটে বেড়াই শালিক খালী নদীর পাড় ধরে। সবুজ ঘাসে মুখ ডুবিয়ে এক মনে ঘাস খাচ্ছে নতুন দাদীর ছাগল দুটি। ছগীর শেখ খ্যাওলা জাল ছূড়ে মাছ ধরছে। খারাই হাতে মাছ কুড়াচ্ছে তার বাচ্চা মেয়েটা। দুটি সাদা বক পাশাপাশি উড়ে গেলো বাঁদার দিকে। বাড়ির উঠোনের সব্জি বাগান থেকে ওলকপি তুলছে আর পান চিবুচ্ছে নতুন দাদী। বাঁশের সাঁকোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবের কথা শুনছে ছাকা মাঝি ও গফুর গাছি। ইমাম সাহেবের নাম কাইয়ুম মৌলভি। চার গ্রাম পরে লেবুপাতা গ্রামে তার বাড়ি। আমি সামনে এগিয়ে যাই। কিছুদুর পরে সবুরদের বাড়ি। সবুরের দাদি সবুরকে গজা খাওয়াচ্ছে বারান্দায় বসে।

মোড়লপাড়ার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম, কে যায়? ঘরের দাওয়ায় বসে জাল বুনছে মোজাম মিয়া। মোজাম মিয়া জন্মান্ধ। পৃথিবীর রূপ সে কখনো দেখেনি । তবুও সরস একজন মানুষ। আমাদের বিচিত্র সব গল্প শোনায় । তার বর্ননা শুনলে চোখের সামনে সিনেমার মত ভেসে ওঠে সব। আরব দেশের গল্প সে বেশী করে। চোখে যারা দেখে না তাদের কান অনেক শার্প হয়। আমি হাঁটছিলাম আপনমনে খুব আস্তে ধীরে। তাও সে শুনতে পেলো। ডাক দিলো।

আমি উত্তর দিলাম , "আমি " । দ্বীপ্ত ভাইয়া হলে বলত, আমি দ্বীপ্ত। আমার গলার স্বর শুনে মোজাম কানা আমাকে চিনতে পারলো, ও ছোড খুকা। আসো। এইহানে বসো। দুডো গল্প করি। আমার তেমন কোন তাড়া নেই। বারান্দায় পাতা খেঁজুর পাটির উপর উঠে বসলাম। রসের জন্য খেঁজুর গাছ কাটার আগে বাইল্লে কাটা হয়। খেঁজুরের পাতা দিয়ে পাটি বোনে চাচী। মোজাম কানা ভালো জাল বুনতে পারে। দিনের বেশিরভাগ সময় সে জাল বোনে আর গুনগুনিয়ে গান গায়। মহুয়া সুন্দরীর পালা, বেহুলা লক্ষীন্দরের পালা, ভানুমতির পালা সব তার মুখস্ত। গলার সুরও চমৎকার্। জুম্মাবারে সে লাঠি হাতে ঠুকঠুক করে চলে যায় মসজিদে। মুয়াজ্জিনের আজান দেওয়ার আগে সে সুললিত স্বরে গজল গায় দুই তিন খানা। গ্রামের বউঝিরা কাজের ফাঁকে তার গজল শোনে। মোজাম কানার বিয়ে হয় গরীব এক চাষীর মেয়ের সাথে। একে তো গরীব চাষা তার উপর একখান ছেলের আশায় তার ছয়ছয়খান মেয়ে হলো পরপর । এত গুলো পেটের অন্ন জোগাতে সে চোখে সর্ষে ফুল দেখে। পারলে তো সে মেয়েগুলোকে গাঙের জলে ভাষায় দেয়। সেই ছয় মেয়ের একজন মোজাম চাচার বউ। শত দু:খ কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করা আশ্চর্য্য সহনশীল এক রমনী।

তাদের একটা ছেলে ছিলো। বেশ সুন্দর দেখতে । সবাই কোলে নিয়ে আদর করত। সবার কথা শুনে মোজাম কানা খুশীতে পুলকিত হত। ছেলের মুখে পিঠে, হাতে পায়ে সে হাত বুলিয়ে ছেলের সৌন্দর্য্য দেখার চেষ্টা করত। গায়ের রং বাপ মাকে ছাড়িয়ে যায় । তাই নিয়ে ওপাড়ার মেজদাদির মত লোকেরা এই চাচীর নামে সারা গাঁয়ে কুৎসা রটাতে ছাড়ে না। ঘটনার কোন সত্যতা ছিলো না। তাই একসময় আর কেউ ওসব কথায় গা করতো না। সাত বছর বয়সে তাদের ফুটফুটে ছেলেটি তিন দিনের কালাজ্বরে মারা যায়।

- চাচী কই ?
- ধান ভানতি গেছে শাবুদ্দি মোড়লের বাড়ি। গরীব মানুষের বেটি, গরীব মানুষের বউ সারা জীবন শুধু খাঁটে গেলো। সুখ পাইলো না একটু।
- চাচা , তোমার কি মন খারাপ ?
- নারে বাপ। মন খারাপ না। নিত্যি অভাবের সংসারে মন খারাপকে পাত্তা দিলি কি জীবনের এতডা পথ পাড়ি দিয়ে আসতি পাত্তাম। বাজান বাঁইচে থাকতি আমারে নিয়ে খুব চিন্তা করত। বেশী জমিজমা নেই। কি হবে আমার? এই ভাবনায় তার রাইতে নিদ হইতো না। তার আওলাদকে ভিক্ষে করে খাতি হবে সারাজীবন। না। ভিক্ষে আমি করিনি। কতদিন শুধু নুন দিয়ে হাত খাইছি, কতক দিন তাও জুটতো না। খিদের জ্বালা বড় জ্বালারে বাপ। হিতাহিত জ্ঞান থাকে না মানুষের্। তবু কখনো হাত পাতিনি কারো কাছে। যাকাত ফেতরা কেউ বাড়ি এসে দিয়ে গেলে নেই। এই টুকু না নিয়ে তো পারিনে। দুটো মানুষের পরনের কাপড় তো কেনা লাগে । জীবন কাটায়ে দিলাম ঘর আর বারান্দায়। এই জীবন যে কি কঠিন তা যে পার করে সেই শুধু জানে।

মাইনষে কয় কানা খুড়া বুবা মানুষগো আল্লাহ বেশী ভালোবাসে। আমার তো মনে হয় না আল্লাহ আমাগে ভালোবাসে। আমারে যদি আল্লাহ ভালোবাইসতো তাহলে কি কানা করে পয়দা করত । জাহান্নামের জীবন কি দুনিয়ার অপূর্ন জীবন থেকে কঠিন! বুঝলে শুভ্র মিয়া। জেবন অনেকক কঠিন। জেবনে অনেক বালা মসিবত আসপে। কাছের মানুষ পর হয়ে যাবে। তখন কিন্তু ঘাবড়ালি চলবে না।

এই সময় চাচী ফিরে এলো। আঁচলে তার চাউল বাঁধা। মোজাম কানা ব্যকুল হয়ে বললো , " চাইল আনিছো। শিজ্ঞির ভাত চড়াই দাও। দুই দিনের খিদে চাগান দিয়ে উঠিছে চালের গন্ধে। " চাচী আমার সাথে দুটো কথা বলে ঘরের বারান্দায় পাতা চুলায় আগুন ধরাতে বসলো। পাতার আগুনের ধোঁয়ায় সারা বারান্দা অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি উঠে পড়লাম। দোকানের দিকে জোরে পা চালালাম। দুই দিন। এই দুটি মানুষ দুই দিন না খেয়ে আছে। কারো কাছে হাত পাতে নি পেটের জন্য। অভুক্ত শরীরে আধা বেলা ধান ভেঙে সে কেজি পাঁচেক চাল নিয়ে ফিরেছে ঘরে। শিমের মাঁচা থেকে কয়েকটা শিম ছিড়ে ভাতের হাড়িতে দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিয়েছে চাচী। চুলার আগুনের আভা চাচীর মুখে। সে মুখে কোন রাগ নেই, অভিমান নেই, কষ্ট নেই। নিজের অজান্তে দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।

Tuesday, 25 February 2014

অনু গল্প-২: তোমার পালা

রাত এগারোটা বাজে আকশে পূর্ণিমার আলোর ছড়াছড়ি চারপাশে শুনশান নিরবতা দূরের ঝোপ থেকে ঝিঁঝি পোকাদের একটানা আওয়াজ ভেসে আসছে শুভ’ আজ মন ভাল একটু বেশী ভাল অনুপম শুভ্র ব্যাংকে চাকরী করে ভালই বেতন পায় সে আর তার বউ পাঁপড়ি রাজার হালে আছে বলতে গেলে বাড়তি কোন ঝামেলা নেই বাচ্চা কাচ্চা নেই বছর তিনেকের মধ্যে নেওয়ার তেমন কোন ইচ্ছেও নেই আজ শুভ্র’র প্রোমোশন হয়েছে জুনিয়র অফিসর থেকে তার র‍্যাঙ্ক এখন অফিসার মনের ভিতর বসন্ত বাতাস আজ আকুপাকু করছে পাঁপড়ির জন্য দামী ঢাকাইয়া জামদানী শাড়ি কিনে এনেছে পাশের ঘরে পাঁপড়ি সেই শাড়ীটা পড়ছে

বাতাসে দরজার পর্দা ঊড়ছে পর্দা সরিয়ে পাঁপড়ি সামনে এসে দাঁড়াল বিয়ের দেড় বছরের মাথায় পাঁপড়িকে তার কাছে এখনো চির নতুন বলে লাগে তার কাছে বুকের বামপাশে হালকা একটা শীতল স্রোত অনুভব করল সে খাট থেকে উঠে পাঁপড়িকে বুকে টেনে নিল তার পৌরুষদিপ্ত ঠোঁটের অত্যাচারে পাঁপড়ি বেসামাল হয়ে গেল জগতের সব কিছু ভূলে গেল তারা প্রেম সাগরের ঢেউয়ে ভাসছে তারা শুধু তারা দুজন শুভ্র’ কেনা সাধের শাড়ীটা ধুলোয় লুটোতে লাগ্ল সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় নেই খাটের উপর তাদের বিবস্ত্র দেহজোড়া পৃথিবীর মহানতম আদিম খেলায় মেতে উঠেছে

হঠাৎ পাঁপড়ি’ মনে হল, ঘরের ভিতর কিছু একটা হাটছে শুভ্রকে সে থামানোর চেষ্টা করল কিন্তু শুভ্র এখন সুন্দরবন এক্সপ্রেসের গতিতে চলছে থামে কিভাবে পাঁপড়ি কোন মতে হাত বাড়িয়ে টেবিল লাইটের সুইচটা জ্বালাল যা দেখল তাতে তারা দুজন চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে গেল গলা দিয়ে স্বর নামছে না মনে হচ্ছে তারা বোবা হয়ে গেছে ঘরের ভিতর একজন অচেনা পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে মুখে রুমাল বাঁধা লাদেনের চেলাদের মত তাদের দিকে পিস্তল বাগিয়ে আছে ধমক দিয়ে বলল, কোন শব্দ নয়!

পাঁপড়ি-শুভ্র বুঝতে পারল তারা ডাকাতের কবলে পড়েছে পাঁপড়ি মনে মনে ভাবার চেষ্টা করল, নাহ দরজা-জানালা তো সে ঠিকই লাগিয়েছে তাহলে লোকটা ফ্লাটের ভিতর ঢুকল কিভাবে ডাকাতটা পাঁপড়ি আর শুভ্রকে সোফার চেয়ারে বেঁধে রাখল একজন পরপুরুষের সামনে বিবস্ত্র পাঁপড়ি বসে আছে তার লজ্জা করছিল সে কাপতে লাগল শুভ্র শরীরও সুগঠিত দুইহাত শক্ত করে চেয়ারে বাঁধা তার ইচ্ছে করছিল ডাকাতটার দুইপায়ের মাঝে কষে একটা লাথি মারতে পুরুষ হয়ে কেউ পুরুষ মানুষকে অপমান করে ডাকাতটা তার বাসায় আলমারীর চাবি ছিনিয়ে নিল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও খুব বেশী টাকা পেল না শুভ্রর মুখে পিস্তলের বাট দিয়ে বাড়ি মেরে বলল,
-      শালা, হারামজাদা ব্যাঙ্কে চাকরি করিস আর বাড়িতে টাকা থাকে না কেমন কথা?

শুভ্রর হাসি পেল, বলল, ব্যাংকার যদি টাকা ব্যাঙ্কে না রাখে তাহলে অন্য লোক ভরসা পাবে কিভাবে
ডাকাত টা মুচকি হাসল, বাড়িতে টাকা না থাক, তোর সুন্দরী বউ তো আছে তাকে দিয়েই না হয় আজকের খ্যাপ উশুল হবে বলেই সে তার নিজের পোষাক খুলতে শুরু করল পাঁপড়ির মুখ বাঁধা সে ফোঁপাতে লাগল শুভ্রও অক্ষম আক্রোশে হাতের বাঁধন ছোটানোর চেষ্ট করল বিবস্ত্র লোকটা পাঁপড়িকে চেয়ারে বসা অবস্থায় তার দুই পা কাঁধে তুলে নিল পাঁপড়ির হাত বাঁধা আছে মুখের বাঁধন খুলে ডাকাত টা চুমু দিতে লাগল এসব লোকের সেক্স মুলত লজ্জাস্থান কেন্দ্রিক শৃংগার মৈথুনে তারা বেশী সময় ব্যয় করে না ডাকাত টাও তাই করল মিনিট দুয়েকের ভিতর কনডম বের করে ফেলল শুভ্র অবাক হয়ে খেয়াল করল ডাকাতটার গোপন জিনিসের সাইজ ছেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে, বলবে ওয়াও পাঁপড়ির সামনে শুভ্রর কিছুটা লজ্জা করতে লাগল



থ্রি এক্স সিনেমায় শুভ্র এরকম চেয়ারে বসা সেক্স দৃশ্য অনেক দেখেছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে সে নিজেও উপভোগ করে নাই না চাইলেও সে লোকটার প্রতিটার স্ট্রোক খেয়াল করে দেখছে বোঝা যাচ্ছে এই কাজে লোকটা বেশ অভিজ্ঞ মাসলমানের মত ফিগার তার আধাঘন্টা পর সে থামল পাঁপড়ির কানে কানে কিছু যেন বলল তারপর কাঁধ থেকে পাঁপড়ির পা নামিয়ে বাথরুমে গেল ক্লান্ত বিব্ধস্ত পাঁপড়ি হাত বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল শুভ্র ভাঙা গলায় জানতে চাইল, ডাকাতটা তোমার কানে কানে কি বলল

পাঁপড়ি ক্লান্ত গলায় উত্তর দিল, “লোকটা বলল তোমার স্বামী দেখতে অনেক কিউট তাকে আমার পছন্দ হয়েছে এবার তোমার পালা শুভ্র
 
^ মাথায় ওঠ